আসক্তি বৃদ্ধির শঙ্কা * অনলাইনে বেচাকেনা * চলছে হোম ডেলিভারিও

ইয়াবা সরবরাহ বেড়েছে দাম কমেছে অর্ধেক: ৭টি রুট চিহ্নিত

যুগান্তর •

বাংলাদেশে মাদক ইয়াবার সরবরাহ বেড়েছে। সাতটি আন্তর্জাতিক রুট দিয়ে ইয়াবা আনা হচ্ছে।

সরবরাহ ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় মরণ নেশা ইয়াবার দাম অর্ধেকেরও বেশি কমে গেছে। আগে চট্টগ্রামে প্রতি পিস ইয়াবা (আকার ও মানভেদে) ৩০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হতো। বর্তমানে প্রতি পিস ইয়াবা মাত্র ৬০ থেকে সর্বোচ্চ ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় মাদকটি আরও সহজলভ্য হয়েছে। আর দাম কমে যাওয়ায় ইয়াবার প্রতি যুব সমাজের আসক্তি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে তাদের শঙ্কা। চট্টগ্রাম মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে ইয়াবা তৈরি হচ্ছে। সাতটি আন্তর্জাতিক রুট ব্যবহার করে দেশি-বিদেশি সন্ত্রাসী চক্র দেশে ইয়াবা আনছে। জনবল সংকটসহ নানা সীমাবদ্ধতায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পক্ষে মাদক নির্মূলে পুরোপুরি ভূমিকা রাখা সম্ভব হচ্ছে না।

অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা আরও বলেন, এক সময় সিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের হাতে চট্টগ্রামে মাদকের বড় চালানগুলো ধরা পড়ত। এখন সিএমপির গোয়েন্দা পুলিশ একটি জোন থেকে চারটি জোনে পরিণত হয়েছে। বেড়েছে জনবলসহ কাজের পরিধি। এরপরও মাদক নিয়ন্ত্রণসহ অপরাধ নির্মূলে সংস্থাটি তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। তবে র‌্যাবের অভিযানে মাদকের বড় বড় চালান ধরা পড়ছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের উপপরিচালক হুমায়ন কবির খন্দকার বলেন, মিয়ানমারের শান প্রদেশ ও এর আশপাশে ইয়াবা তৈরি করা হচ্ছে। শান থেকে মান্দালে হয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে ইয়াবা। ইয়াবা সরবরাহের সাতটি পয়েন্টের মধ্যে রয়েছে- সান-তুয়াঙ্গি-ইয়াঙ্গুন হয়ে নৌপথে সিত্তে হয়ে বাংলাদেশের মহেশখালী পর্যন্ত।

একইভাবে মিয়ানমারের সিত্তে হয়ে বরিশালের উপকূলীয় এলাকায় ইয়াবার চালান আসে। মান্দালে-তুয়াঙ্গি-মাগওয়ে-মিনুর-পাদান-সিত্তেই-মংডু হয়ে কক্সবাজারের টেকনাফে এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে আসে ইয়াবার চালান। ইয়াবার কিছু কিছু চালান মিয়ানমার থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশেও ঢুকছে।

মান্দালে-সাগাইং অঞ্চল-মনোয়া-কালে-মোরে (মনিপুর)-আইজল (মিজোরাম)-পানিসাগর-শিলং-করিমগঞ্জ হয়ে জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকে ইয়াবা। শিলং-শিলিগুড়ি-মালদা হয়ে যশোর ও সাতক্ষীরার তিনটি রুটে ইয়াবার চালান আসছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের সহকারী পরিচালক ইমদাদুল হক মিঠুন বলেন, ইয়াবা বিক্রির ধরন পালটে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে অনলাইনে ইয়াবা বেচাকেনা হচ্ছে। অনলাইনে বিভিন্ন গ্রুপ খুলে ইয়াবা বিক্রি করা হচ্ছে। বিক্রির টাকা লেনদেন হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে। দেওয়া হচ্ছে হোম ডেলিভারি।

সিএমপির কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, প্রথম প্রথম ইয়াবার দাম (মান ও আকারভেদে) ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা কিংবা আরও বেশি ছিল। বর্তমানে ৬০ থেকে সর্বোচ্চ ২০০ টাকার মধ্যে ইয়াবা মিলছে। বহনে সহজলভ্য হওয়ায় এমনটাই হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ফেনসিডিল বিক্রি হচ্ছে আড়াই হাজার টাকায়। এ কারণে অনেকের পক্ষে এ মাদক কেনা সম্ভব হয় না। অপরদিকে দাম কম থাকায় মাদকসেবীদের ঝোঁক ইয়াবার দিকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলায় হাত বাড়ালে মিলছে ইয়াবা। দুই বছরে ইয়াবা ব্যবসায়ী ও সেবী উভয় বেড়েছে। ইয়াবা সহজলভ্য হওয়ায় এবং দাম কমে যাওয়ায় এমন হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর-দক্ষিণ) সালাম কবির বলেন, ‘ডিবির মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত আছে। কিছুদিন আগেও ২৯ হাজার ইয়াবা ও ৪৫০ গ্রাম আইস উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ইয়াবা সরবরাহ বেড়েছে বলে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মেট্রো অঞ্চলের উপপরিচালক মুকুল জ্যোতি চাকমা বলেন, এখানে ২০১২ থেকে ২০১৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত কর্মরত ছিলাম। তখন একটি ইয়াবার দাম ছিল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। অথবা আরও বেশি। ওই সময়ে যে পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার হতো এখন সেটার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি উদ্ধার হচ্ছে। সরবরাহ বেড়েছে বলে উদ্ধারও হচ্ছে বেশি।

বর্তমানে ইয়াবার দাম অর্ধেকে নেমেছে। দেড়শ’ থেকে দুইশ টাকায় ইয়াবা মিলছে। তিনি বলেন, এক সময় ইয়াবাসহ যারা ধরা পড়ত তাদের বেশির ভাগই ছিল উখিয়া, টেকনাফ কিংবা কক্সবাজারের লোক। এখন অন্য জেলার লোকও ইয়াবাসহ ধরা পড়ছে। এর অর্থ ইয়াবা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ৩৭ ধরনের কাজ করে। এর মধ্যে মাদক উদ্ধার একটি। তবে সময়ের সঙ্গে মাদক কারবারিরা মাদক বহন ও বিক্রিতে পরিবর্তন এনেছে।

এখন বেশির ভাগ ইয়াবা বিক্রি হচ্ছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। অর্ডার ও টাকা নেওয়ার পর মাদক নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এখন পেটের ভেতর করেও ইয়াবা সরবরাহ করা হচ্ছে। অথচ পেটের ভেতর ইয়াবা আছে কিনা তা যাচাইয়ের জন্য অধিদপ্তরের কাছে কোনো যন্ত্র নেই।